Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
নাঙ্গলকোটের ই ছেলে, বিমান বাহিনী কর্মকর্তা পাইলট অফিসার শরিফুল এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় শাহাদাত বরন করেছেন
Details

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান গতকাল রবিবার টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার মহিষমারা গ্রামে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফুল হক (২৫)। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে অন্য আরোহী স্কোয়াড্রন লিডার মামুনুর রশীদ (৪০) প্যারাসুটের মাধ্যমে নেমে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
বিমান বাহিনী সূত্রে জানা যায়, এল-৩৯ প্রশিক্ষণ বিমানটি গতকাল সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে আকাশে ওড়ে। প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পথে মধুপুরের মহিষপাড়া গ্রামের ঘোনাপাড়ার আকাশে পৌঁছার পর বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। আছড়ে পড়ে সবুজ ধানক্ষেতে।
প্রত্যক্ষদর্শী শুকুর মামুদ জানান, হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে একটি বিমান ধানক্ষেতে এসে পড়ে। এর আগমুহূর্তে এক ব্যক্তি প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসেন। তিনি সামান্য আহত হন। ওদিকে বিমানটি ধানক্ষেতে আছড়ে পড়েই উল্টে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন দৌড়ে গিয়ে দা দিয়ে সিটবেল্ট কেটে পাইলটকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, 'পাইলটকে উদ্ধারের পর আমরা একটি বাড়িতে নিয়ে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে শুরু করি। তাঁর কান ও মুখ দিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে দ্রুত একটি রিকশাভ্যানে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। পথে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এসে তাঁকে নিয়ে যায়।'
জানা যায়, ঘাটাইল সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই পাইলট শরীফ মারা যান। পরে মৃতদেহ ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মহিষমারা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবদুল কাদের জানান, বিমানটি ওপরে এলোমেলো অবস্থায় ঘুরছিল। তখন বিমান থেকে একজন প্যারাসুট দিয়ে নিচে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ পর বিমানটি একটি ধানক্ষেতে আছড়ে পড়ে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে প্যারাসুট দিয়ে নামা ব্যক্তি জানান, বিমানের ভেতর আরেকজন আছেন। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন বিমানের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, ককপিটে সিটবেল্ট বাঁধা অবস্থায় একজন অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। স্থানীয় কৃষক শুকুর মাহমুদ তাঁর বাড়ি থেকে দৌড়ে একটি দা নিয়ে আসেন এবং বেল্ট কেটে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
মহিষপাড়া গ্রামের হযরত আলী ও শালিকা গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম মিয়া জানান, বিমানটি গ্রামের আকাশ অতিক্রমের সময় বিকট শব্দে ধানক্ষেতে আছড়ে পড়েই আনুমানিক ২০০ গজ দূরে গিয়ে উল্টে যায়। এ সময় বিমানটি থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে।
দুর্ঘটনার পর পরই সেনা, বিমানবাহিনী ও পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাহাড় কাঞ্চনপুর বিমানবাহিনী ঘাঁটির স্কোয়াড্রন লিডার রাফিউল করিম গতকাল বিকেলে বলেন, 'শিগগির উদ্ধারকাজ শুরু হবে।'
নিহত পাইলট শরীফের ব্যাচমেট পাইলট এনাম বলেন, 'চার বছর আগে আমরা একসঙ্গে বিমানবাহিনীতে যোগ দিই এবং দুই বছর আগে পদোন্নতি হয়।'
পুলিশের এডিশনাল এসপি মাসুদ বলেন, 'স্থানীয় লোকজনের কাছে সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।'
আইএসপিআরের বক্তব্য : গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের দুইজন পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার মামুনুর রশীদ ও পাইলট অফিসার শরিফুল হক প্যারাসুট নিয়ে বিমানটি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। দুর্ঘটনার পর আহত দুই পাইলটকে ঘাটাইল সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সামরিক হাসপাতালে পৌঁছলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পাইলট অফিসার শরিফকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর পাইলট মামুন সুস্থ আছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, দুর্ঘটনার পর পরই সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (পরিচালন ও প্রশিক্ষণ) এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার বিমানবাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এ সময় তিনি উদ্ধার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শরিফ ছিলেন তিন ভাই-বোনের সবার ছোট : প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট অফিসার শরিফ ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। শরিফের ভগি্নপতি মুকতাসীমও বিমানবাহিনীর একজন উইং কমান্ডার। তিনি গত রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, শরিফ ২০০৮ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। বিমানটি দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার আগে শরিফ কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেন। থাকতেন কুর্মিটোলায় বিমানবাহিনীর অফিসার মেসেই। শরিফের বাবা ফজলুল হক মোল্লা ও মা বেগম রওশনারার বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার পশ্চিম কাটাশুরে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল গ্রামে।

Attachments
Image
Publish Date
10/04/2012